চকবাজার অগ্নিকাণ্ডে নিহতের তালিকায় ২৫ জনই শ্রমিক  

পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে ২৫ জন শ্রমিক বলে জানা গেছে। আর আহতদের মধ্যে ১০ জন শ্রমিক রয়েছেন।

অগ্নিকাণ্ডের পর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় গঠিত হতাহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান সংক্রান্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

শ্রম মন্ত্রণালয় নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারকে এক লাখ এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ার সুপারিশও করা হয়।

‘হতাহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান সংক্রান্ত কমিটি’র প্রধান এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের উপ-মহাপরিদর্শক জাকির হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের কমিটিকে দুইদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল। কমিটি শনিবার শ্রম মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

রোববার কমিটি প্রধান জাকির হোসেন বলেন, চকবাজারের আগুনে আহতদের মধ্যে ১২ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তারমধ্যে ১০ জন শ্রমিক পাওয়া গেছে। আহত শ্রমিকদের মধ্যে রিকশাচালকসহ বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক রয়েছে। বাকি দুজন ব্যবসায়ী।

আর হাসপাতাল থেকে মরদেহ হস্তান্তর হওয়া ৪৭ জনের মধ্যে ২৫ জনকে শ্রমিক হিসেবে চিহ্নিত করতে পেরেছে কমিটি।

নিয়মানুযায়ী আহত শ্রমিকদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার এবং নিহত শ্রমিকের পরিবারকে এক লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে হতাহত ৩৫ জন শ্রমিককে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে পরবর্তীতে যদি কেউ প্রমাণাদি নিয়ে আসেন, তাহলে তিনিও ক্ষতিপূরণের অর্থ পাবেন।

গত বুধবার রাতে চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে মারা যান ৬৭ জন। আহত হন আরও অনেক। এখানকার নন্দকুমার দত্ত রোডের শেষ মাথায় চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পাশে ৬৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের ওয়াহেদ ম্যানশনের নিচে ক্যাভার্ড ভ্যানের সিএনজি চালিত সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।

আর ওয়াহেদ ম্যানশনের ভবনটির দ্বিতীয় তলায় কেমিক্যাল গোডাউন থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

অগ্নিকাণ্ডের সঠিক কারণ উদঘাটন না হলেও সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।

ওই দিনই শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে দুইটি কমিটি গঠন করে দেয়। এছাড়া হতাহতদের জন্য অর্থ সহায়তার ঘোষণা দেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান।

এদিকে শ্রম মন্ত্রণালয় দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে কেমিক্যাল মজুত ও কলকারখানা পরিদর্শন সংক্রান্ত আরেকটি কমিটি গঠন করেছিল। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ আহম্মদকে প্রধান করে সেই কমিটিকে ১০ কার্যদবিসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

অপরদিকে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় চকবাজারের সব পারফিউমারির দোকান বন্ধ দেখা গেছে। তবে চুড়িহাট্টার চেয়েও চকবাজার ও মৌলভীবাজার এলাকায় আরও অনেক কেমিক্যালের দোকান রয়েছে।

এছাড়াও মৌলভীবাজার ও চকবাজার এলাকাটি দেশের বৃহত্তম পাইকারী বাজার হিসাবে খ্যাত। আর জায়গা না থাকায় ঘুপচি ঘরের মধ্যে ছোট ছোট দোকানে প্রতিটি পণ্যসামগ্রীতে ভরা। এমন পরিবেশেই প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছেন কয়েক হাজার ব্যবসায়ী।

মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মওলা বাংলাদেশ টাইমস’কে বলেন, অনেক বছর ধরে মৌলভীবাজার, বেগমবাজার ও চকবাজারে পাইকারি বাজার গড়ে উঠেছে। পুরনো ভবনগুলো অপরিকল্পিতভাবে হয়েছিল। অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই ঝুঁকি কমাতে হলে পাইকারি বাজারটি নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনা করা দরকার।

এই অগ্নিকান্ডের ঘটনায় হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনের দুই মালিককে খুঁজছে পুলিশ। চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত এক ব্যক্তির ছেলের করা মামলায় তারা দুজন আসামি। তবে রোববার বিকেল পর্যন্ত তাদের অবস্থান নিশ্চিত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

বৃহস্পতিবার রাতে চকবাজার থানায় মো. আসিফ বাদী হয়ে হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনের দুই মালিক মো. হাসান, মো. শহীদসহ ১০-১২ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেন। মো. আসিফের বাবা মো. জুম্মন চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডে নিহত হন।

আসিফ মামলার এজাহারে বেপরোয়া বা তাচ্ছিল্যপূর্ণ কাজ করে মৃত্যু ঘটানো, ঘরবাড়ি ধ্বংসের জন্য আগুন বা বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার, উপাসনালয়, মানুষের বসতি বা সম্পত্তি রাখা হয়, এমন দালান ধ্বংস ও লোকসানের অভিযোগ এনেছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মু. মোরাদুল ইসলাম বাংলাদেশ টাইমস’কে বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ভূগর্ভস্থ তলাসহ পাঁচটি তলায় পাঁচটি ইউনিট ও প্রতিটি ইউনিটে চারটি করে ঘর ছিল। দুটি ইউনিটে দুটি পরিবার ভাড়া ছিল। আর ভবনটির নিচতলায় দোকানপাট ভাড়া দেওয়া ছিল। সেখানে অনেকেই মারা গেছেন।

এদিকে স্থানীয় বাসিন্দা আশিক উদ্দিন সৈনিক বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, মো. হাসান (৫০) ও মো. সোহেল ওরফে শহীদ (৪০) দুজনেই নিরাপদে আছেন। তবে আমার বয়স ৩৩ বছর। আর আমি এই বয়সেও এখানে যে পারফিউমের গোডাউন ছিল সেটা সম্পর্কে জানি না। আমাদের না জানিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বেশি টাকা ভাড়া নিচ্ছেন তারা।

অগ্নিকাণ্ডে নিহত ওয়াসিউদ্দীন মাহিদের বাবা নাসিরউদ্দীন জানান, তিনি শুনেছেন, ঘটনার দিন মো. হাসান সপরিবার ঢাকার বাইরে ছিলেন। তারা আগে থেকেই চট্টগ্রামে বেড়াচ্ছিলেন। রাতে আগুন লাগার পর আরেক মালিক মো সোহেল ওরফে শহীদ ও তার মা এখান থেকে বেরিয়ে যান। নাসিরউদ্দীন ছেলের খোঁজে বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন এবং তিনি নিজেই তাঁদের দেখেছেন।

 

টাইমস/টিআর/জেডটি

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মিথিলা হাতে উঠলো ভারতের ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কার May 04, 2024
img
আট দফা কমার পর বাড়লো স্বর্ণের দাম May 04, 2024
img
মুসলিম উম্মাহর একাত্মতা ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী May 04, 2024
img
সুন্দরবনের গহীনে ভয়াবহ আগুন May 04, 2024
img
সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার May 04, 2024
img
আইপিএলে প্লে অফে ওঠার দৌড়ে এগিয়ে যারা May 04, 2024
img
শিডিউল বিপর্যয়ে ভোগান্তিতে যাত্রীরা, ৬ ট্রেনের যাত্রা বাতিল May 04, 2024
img
সরকার গণমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিতে কাজ করছে: প্রতিমন্ত্রী May 04, 2024
img
শিক্ষকদের মর্যাদা ও বেতন বাড়াতে কাজ করছে সরকার : শিক্ষামন্ত্রী May 04, 2024
img
ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হামাস May 04, 2024